Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ব্যবসা বাণিজ্য

চাঁদপুরের ব্যবসা বাণিজ্য

নদীগর্ভে বিলিন হওয়া নরসিংহপুরে স্থাপিত হয় চাঁদপুর থানা ও অফিস আদালত। তখন পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গমস্থল ছিল বর্তমান স্থান থেকে প্রায় ৬০ মাইল দক্ষিণে। নরসিংহপুর ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলিন হয়। পদ্মা, মেঘনা তীরে ধীরে ধীরে বর্তমান চাঁদপুর পত্তন হয়। চাঁদপুর ১৭৭৯ সালে রেনেলের মানচিত্রে ত্রিপুরা জেলার সঙ্গে নরসিংহপুরে চাঁদপুরের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত হয়। ১৭৭৮ সালে চাঁদপুর মহকুমায় রূপান্তরিত হয়। এর আগে থেকেই পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়ার সঙ্গমস্থলে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক চাঁদপুর বন্দরের সুখ্যাতি সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদপুর শহরটিকে দুভাগে বিভক্ত করে ডাকাতিয়া নদী। উত্তর পাড়ে নতুনবাজার আর দক্ষিণ পাড়ে পুরাণবাজার গড়ে ওঠে। মূল পুরাণবাজার ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বহুল পরিচিত। চাঁদপুর যে একটা প্রাচীনতম ব্যবসা কেন্দ্র তা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। কারণ ইতিহাসে আছে ‘মনসা মঙ্গল’ খ্যাত বিশিষ্ট চাঁদ সওদাগর সপ্তডিঙ্গা ‘‘মধুকর’’ ভাসিয়ে এ নদী বন্দরে বাণিজ্য করতে আসতেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে এই চাঁদ সওদাগরের নাম অনুসারেই এই বন্দরের নামকরণ করা হয় চাঁদপুর।

প্রাচীনকাল থেকেই চাঁদপুর অন্যতম নদীবন্দর ও ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত। বৃটিশ শাসন আমলে পাট ব্যবসার জন্য চাঁদপুরের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অবিভক্ত বাংলার সিংহদ্বার হিসেবে চাঁদপুরের খ্যাতি ছিল সমধিক। পুরানবাজাকে কেন্দ্র করেই চাঁদপুরের ব্যবসা বাণিজ্য। বৃটিশ শাসন আমলের প্রথম থেকেই পুরাণবাজার একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। পুরাণবাজারের পশ্চিমে মেঘনা ও উত্তরে ডাকাতিয়া নদী। ঐ সময় নদী পথ ছিল বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম। বৃটিশ আমলে চাঁদপুর হয়ে কলিকাতা যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল। তখন চাঁদপুরকে  ‘Gate way to Eastern India’ বলা হতো। চাঁদপুর বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে সারা ভারতবর্ষে সুপরিচিত। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী বন্দর ও প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র হিসাবে চাঁদপুর বন্দর এই উপমহাদেশের অত্যন্ত পরিচিত একটি সফল নাম। দেশের চতুর্মূখী যোগাযোগ ব্যবস্থার ধারক দেশের বিখ্যাত এ বন্দর এক সময় পূর্ব বাংলা-পশ্চিম বাংলা এবং সেভেন সিষ্টার্স নামে খ্যাত ভারত বর্ষের   বিস্তীর্ণ পাহাড়ী অঞ্চলের মধ্যে  ব্যবসায়িক যোগসূত্র ও মেলবন্ধন তৈরি করে যাচ্ছিল।  বহুকাল আগে থেকেই চাঁদপুরের রূপালি ইলিশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এছাড়া এখানকার অন্যান্য মাছ, চিংড়ি, ব্যাঙ  ইত্যাদি সুদূর ইউরোপ ও আমেরিকা পর্যন্ত রপ্তানি হয়। চাঁদপুরের উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- জুট মিল, লবণ মিল, ডাল মিল, তৈল মিল, ময়দা মিল, আটার মিল, চাউল কল, চিড়া কল, কোল্ড ষ্টোরেজ, বরফ কল, স্বয়ংক্রিয় চাউল কল, ম্যাচ ফ্যাক্টরী, সাবান ফ্যাক্টরী, সিনথেটিক রশি তৈরির কারখানা, স-মিল, ইস্পাত মিল, নেট ফ্যাক্টরী এবং আরও অনেক ছোট বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। চাঁদপুরে প্রতি মাসে প্রায় দেড় হতে দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যিক লেন-দেনের সরকারী রেকর্ড রয়েছে। এখানে অনেক বিদেশী ব্যবসায়ীদের সমাগম ঘটে। নাখোদারা এবং পাকিস্তানের সেই বিখ্যাত ২২ পরিবার এবং ভারতের মারওয়ারীরা এখানে দীর্ঘদিন অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যবসা করেছেন। বৃটিশ শাসন আমলে চাঁদপুর পাট ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল। চাঁদপুর থেকে সরাসরি বিদেশে পাট রপ্তানি হতো। পাট ব্যবসা কেন্দ্র গুলি পুরাণবাজারে গড়ে ওঠে। শিল্পবিস্তারে মরহুম ওয়ালিউল্লাহ পাটওয়ারী, সারদা বাবু, সরোজ কুমার দাস, ইদ্রিছ মজুমদার, বজলুল গণি চৌধুরী, চিত্তরঞ্জন রায় চৌধুরীর নাম আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়। মেঘনা-ধনাগোদা ও চাঁদপুর-হাইমচর সেচ প্রকল্প, এ জেলায় কৃষিপণ্য উৎপাদনেও নতুনমাত্রা এনে দিয়েছে। চাঁদপুরে রয়েছে অনেকগুলি লবণ শোধানাগার।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুরাণবাজারের ব্যবসা বাণিজ্যের আরো প্রসার ঘটে। বাজারের পরিধি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অনেক গুণ বেড়ে যায়। এ সময় কিছু উৎসাহী ব্যবসায়ীর উদ্যোগে চাঁদপুর শিল্প ও বণিক সমিতির পুনর্গঠিত হয়। সমিতির সদস্য সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। চাঁদপুর শিল্প ও বণিক সমিতি শুধু একটা ব্যবসায়ী সংগঠন হিসেবেই নয়, এ সমিতি চাঁদপুরের একটি অন্যতম সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়। সমিতির সভাপতি জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিমের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বণিক সমিতি ১৯৮৫ সালে ‘‘চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’’ হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯১ সালে ‘এ’ ক্লাশ চেম্বারে উন্নীত হয়। তিনিই চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রিকে ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং নিজে   সপ্তম বারের মত এফবিসিসিআই পরিষদের পরিচালক নির্বাচিত হন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীরা চাঁদপুর শহরের উন্নয়নে ও সমাজ সেবায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। ১৯৪৬ সালে চাঁদপুর কলেজ প্রতিষ্ঠায় পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীদের অবদান স্মরণীয়। বলা যায় পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীরা চাঁদা তুলে এ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া চাঁদপুর মহিলা কলেজ, বি.ডি হল, টাউন হল নির্মাণেও তাঁদের অবদান রয়েছে ।

১৯৬০ সাল থেকে মেঘনার করাল গ্রাসে নতুনবাজার ও পুরাণবাজার ভাঙ্গতে শুরু করে। নদী ভাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ। ভাঙ্গনরোধে বণিক সমিতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এ সমিতি ভাঙ্গনরোধ করার জন্য বার বার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দীর্ঘদিন থেকে পুরাণবাজার ব্যবসা বাণিজ্য সড়ক যোগাযোগের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাঁদপুর-শরিয়তপুর ফেরী সার্ভিস প্রবর্তন এবং ঢাকা-পুরাণবাজার-চট্রগ্রামের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় চাঁদপুরের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ও পুরাণবাজারের মধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দিয়ে চাঁদপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যের সোনালী সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।