পৌরসভার ইতিবৃত্ত
ব্রিটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সমূহ বিশেষ করে আসাম প্রদেশে ব্রিটিশ শাসন সুসংহত করার জন্য কলকাতা হতে ডিব্রুগড় (তিন সুকিয়া বাজারের নদীর পাড়) পর্যন্ত রেলরাস্তা নির্মাণ করা ইংরেজ শাসকদের জন্য যখন অপরিহার্য হয়ে পড়ে, তখন তারা চাঁদপুর হয়ে লাকসামের মধ্য দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৮৮৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের চাঁদপুর লাকসাম শাখা নির্মিত হয়। এর কিছু পূর্বে চাঁদপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে ইংরেজ ও তাদের দেশীয় দোসররা নীল চাষ শুরু করে। অবশ্য প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে ১৮৭৩ সালে সর্বশেষ নীল কুঠিসমূহ বন্ধ হয়ে যায়। ইংরেজ কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে পাট ব্যবসায় তাদের অর্থ বিনিয়োগ করা শুরু করে। রেলওয়ে বিভাগের সাহেবদের আনাগোনা, ২২টি বিখ্যাত পাট কোম্পানির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ইত্যাদি কারনে মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনার উভয় প্রান্তে চাঁদপুর লোকালয়ে তারা একটি পৌরসভা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে মহকুমা স্থাপনের ১৮ বছর পর ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের শাখা লাইনটি স্থাপনের ১১ বছর পর এবং সরকারি আদেশে ১৮৯৬ সালের ১ অক্টোবর এক সরকারী পরিপত্রের মাধ্যমে চাঁদপুর প্রথমে ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভা হিসাবে যাত্রা শুরু করে। সর্ব প্রথম ৯ জন সদস্য নিয়ে (যাদের মধ্যে ৪ জন ইংরেজ ও ৫ জন স্থানীয় গন্যমান্য নাগরিক) পৌর পরিষদ গঠিত হয়। তাঁদের সবাই ইংরেজ ভাইসরয় কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। পরবর্তী সময়ে শুধুমাত্র হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানকারীগণের সরাসরি ভোটে পৌর পরিষদ নির্বাচিত হতো। পর্যায়ক্রমে হোল্ডিং-এ বসবাসকারী আবাসিকদের মধ্যে যারা ন্যূনতম এন্ট্রান্স পাশ ছিলেন তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং ভোট প্রদান করতে পারতেন। ১৯২০ সালের আগে কোন ভোটের ব্যবস্থা ছিল না, পৌর পরিষদ ইংরেজ ভাইসরয় কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। পৌরসভার নির্বাচিত নাগরিক, যাঁদের ভোটাধিকার ছিল তাঁদের প্রয়োগকৃত ভোটে ১৯২০ সনে রমনীমোহন রায় প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এক নজরে চাঁদপুর পৌরসভা
ঐতিহ্যগতভাবেই চাঁদপুরকে প্রাচ্যের ডান্ডি বলা হত। নদী মাতৃক বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তর নদী বন্দর ও প্রসিদ্ধ বাণিজ্য নগরায়ন হিসাবে এই মহকুমা শহরটির খ্যাতি ছিল পৃথিবী ব্যাপি। রূপালী ইলিশের রাজধানী হিসাবে চাঁদপুরের সুনাম এখনও বহমান। পৌরসভার কার্য সম্পাদনে পূর্বাপর আমাদের সাফল্য ইর্শনীয়। কর্মক্ষেত্রে বর্তমানে আমাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ও অর্থনৈতিক দুষ্প্রাপ্যতার কারনে আমাদের সৃষ্টি, সামর্থ্য ও সম্ভাব্যতাকে বাধাগ্রস্থ করছে। ভৌগলিক বিশ্লেষনে পদ্মা-মেঘনা ও ডাকাতিয়ার সংগম স্থলে চাঁদপুর পৌরসভা অবস্থান। ডাকাতিয়া নদীটি চাঁদপুর পৌরসভার ভূ-খন্ডকে পুরানবাজার ও নতুনবাজার নাম করনে দুইভাবে বিভক্ত করেছে।
বর্তমানে বর্ধিতাংশ পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ড সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনায় ২০২১ দশকের ভিশনকে সামনে রেখেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, কেএফডব্লিউ, জিটিজেড এর আর্থিক সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মহোদয়ের সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনায় চাঁদপুর শহরকে একটি আধুনিক, টেকসই, বাস উপযোগী সুন্দর পরিবেশ বান্ধব নাগরায়নের লক্ষ্যে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে উন্নয়ন পরিকল্পনায় ০৬টি প্রকল্প যথাঃ EDDRP, DTIDP, BMDF, UGIIP-II,৩৭ জেলা শহর PRAPঅন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। উক্ত প্রকল্প গুলোর মাধ্যমে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ এবং হত দরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। বর্তমানে দিনের চাঁদপুর শহর থেকে রাতের শহর অনেক সুন্দর ও ঝলমলে। বিগত ছয় বছরের উন্নয়ন ও অফিস ব্যবস্থাপনা এবং ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরের বাজেটে চাঁদপুর সুশীল সমাজসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমীতে উন্মুক্ত আলোচনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্বোধনী ঘোষণার মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস